অপেক্ষা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার বাবাকে মেরে ফেলে। তখন আমার বয়স সাড়ে চার। আমি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বাবার জন্য অপেক্ষা করে থেকেছি। তবে মুখ ফুটে সে কথাটা কাউকে বলতে পারি নি। যেসব মানুষের বয়স চারপাশের বড় মানুষদের মত হয় না, তারা বুকের ভিতর কথা লুকিয়ে রাখতে পারে।

বালিকাবেলায় আমি বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করেছি। বৃষ্টিতে সবুজ আর গোলাপি রঙের চুলের মত কড়ই আর শিরীষফুল কীভাবে ভিজে যায় তা দেখবার জন্য।

যখন আমার তরুণী বয়স, আমি আমার প্রেমিকের জন্য ট্রেন স্টেশনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেছি। কিছু ট্রেন এসেছে, কিছু ট্রেন আসে নি। 

মধ্যবয়সে অপেক্ষা করেছি অতিথির জন্য। জানালা দিয়ে পথের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখেছি কিভাবে জাফরানের রঙ দুধের ভিতর গলে গলে যায়। 

জীবনের শেষপ্রান্তে এসে আমি আজকাল আর কারো জন্য, কিংবা কোনকিছুর জন্য অপেক্ষা করিনা। অপেক্ষা করিনা কোজাগরী পূর্ণিমার জন্য। শিউলিফুলের জন্য। নতুন কনের চোখ জলে ভিজিয়ে দেওয়া বিসমিল্লাহ খানের শানাই কিংবা দূর্গাপূজার ঢাকের শব্দের জন্য। 

আমি কোথাও গেলে আমার কুকুর শুধু আজও সারাদিন দরজার সামনে  অপেক্ষা ক'রে বসে থাকে। ও এখনো মানুষ হয় নি!



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ


কল্যাণী রমা-র জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ বি টেক করেছেন । এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে।
প্রকাশিত বইঃ
আমার ঘরোয়া গল্প;
হাতের পাতায় গল্পগুলো ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা;
রাত বৃষ্টি বুনোহাঁস অ্যান সেক্সটন, সিলভিয়া প্লাথ, মেরি অলিভারের কবিতা;
মরণ হতে জাগি হেনরিক ইবসেনের নাটক;
রেশমগুটি;
জলরঙ;
দমবন্ধ।