ঘরের কোণ
ঘরের এই কোণটুকু আমার। কোণঠাসা হ'য়ে। এখানে আফ্রিকান ভায়োলেট ফুটে আছে। মোমবাতি থেকে লাইলাকের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। ছোট জলপ্রপাত থেকে ধাপে ধাপে জল। কুকুরছানা পপি মুখে ক'রে ওর খেলনা সজারু নিয়ে ছুটে আসছে। নীল রঙ ক'রা সিরামিকের কৌটো - আমার মেয়ে ছেলেবেলায় বানিয়েছিল। নীল আমার প্রিয় রঙ, আমার মেয়েরও। তাতে ও এঁকেছে ফুল, মেঘ। রেখেছি একটা নীল রঙের লম্বা ফুলদানি - আমি সেখানে জ্বলে যাওয়া দিশলাই-এর কাঠি গুঁজে রাখি। পড়ে আছে পা-ভাঙা সোপস্টোনের সরস্বতী। ছেলেবেলায় আমার সরস্বতী হওয়ার ইচ্ছে ছিল। তাই নাস্তিক হ'য়েও সরস্বতী বুকে ক'রে ঘুরে বেড়াই।
ভূগোল বইতে পড়েছিলাম বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়েছিল, তখন তার মানচিত্রে আয়তন ছিল ৫৫ হাজার বর্গমাইল। এই খুব ছোট দেশের উপর দিয়ে অনেক ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। তবু আমার এই দেশটি বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যায় নি।
আমার ঘরের এই কোণটুকু বাদ দিয়ে বাড়ির বাকি ৫৫ হাজার বর্গমাইলে বড় বড় পাইন গাছ ভেঙ্গে পড়ছে। পাইন গাছের মাথা ভর্তি বরফের মুকুট থাকলেও সত্তর ফুট লম্বা গাছ যখন মাটিতে ভেঙে পড়ে, তখন তাতে আগুন ধরে যায়। চকমকি পাথরের মনমুগ্ধ ক'রা আগুন নয়, এ দাবানল। বনের হরিণ মারা যায়।
আমি শুধু ভাবছি কীভাবে আমার পপিকে বাঁচাব। ওকে আমার ঘরের এই ছোট কোণটায় এনে রাখছি। ছোট্ট কুকুরছানা। ও তো দুই ফুট জায়গায় শান্ত হ'য়ে থাকতে পারে না। লাফ দিয়ে ও বনের হরিণ হ'য়ে যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন