তবু মনে রেখো
"যদি পড়িয়া মনে
ছলোছলো জল না ই দেখা দেয় নয়নকোণে
ছলোছলো জল না ই দেখা দেয় নয়নকোণে
তবু মনে রেখো।"
রবিঠাকুরের এই গানটা যখনই শুনি, আমার হৃৎপিণ্ডের সব তার ছিঁড়ে যায়। আমি এ গান শুনতে পারি না। না শুনেও থাকতে পারি না। আমার নিজের মৃত্যুর থেকেও ভয়ংকর মনে হয় আমায় কেউ ভুলে যাবে সেই নির্মমতাটুকু।
নিজের কথা যদি ভাবি, তখন মনে হয় আমি তো গতবছর স্টার ম্যাগনোলিয়া গাছটায় যে রবিন পাখি বাসা বেঁধেছিলো, তাকে ভুলে যেতে পারি নি। যা কিছু নিঃশ্বাস নেয়, তাকে ভুলে যাওয়া যায় না। আর যা কিছু নিঃশ্বাস নেয় না - চাঁদের মত, নদীর মত, মাটির মত - তাকেও কি ভুলে যাওয়া যায়?
যদি তার প্রাণের কোথাও আমি দাগ না কেটেও থাকি, আমার কথা মনে ক'রে তার চোখে যদি জল নাও আসে- তবু সে মনে রাখুক। মনে রাখুক সব বেদনার কথা, মনে রাখুক সব প্রেমের কথা। কেননা মানুষের জীবন যে অমৃতের গল্প।
সেই গল্পের কথা যেন ভুলে না যাই তার জন্য সেদিন আমি এক ফরগেট-মি-নট ফুল দিয়ে বানানো আংটি কিনে এনেছি। সত্যিকারের ফুল প্রেস ক'রে বানানো। হালকা নীল রঙের। মাঝখানে একটু হলুদ।
মনে পড়ছে আমি কোথায় যেন পড়েছিলাম ফরগেট-মি-নট ফুলের জন্মকথা। ঈশ্বর সব ফুলে রঙ দেওয়া শেষ ক'রে তুলি গুছিয়ে রাখছেন। খুব ক্ষীণ স্বরে ছোট্ট একটি ফুল ঈশ্বরকে তখন বলেছিলো, 'হে ঈশ্বর, আমার রঙ কোথায়? ফরগেট-মি-নট।' ঈশ্বরের কাছে খুব অল্প একটু হালকা নীল রঙ ছাড়া আর কোন রঙ তখন ছিল না।
ফরগেট-মি-নট তার জীবনে সেই অল্প একটু রঙ পেয়েই খুব খুশি হ'য়ে উঠেছিলো।
শেষ যুদ্ধে মানুষও তৃপ্ত হোক।
" আমার নিজের মৃত্যুর থেকেও ভয়ংকর মনে হয় আমায় কেউ ভুলে যাবে সেই নির্মমতাটুকু। " -
উত্তরমুছুন